Health Tips

উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা

আজকে আমরা জানবো উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা সম্পর্কে। মানুষের শরীরে জন্য প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম দরকার ।ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হাড়ের বৃদ্ধি করে এবং হাড়ের শক্তি বজায় রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এটি মানুষের শরীরের সুস্থ কোষের কার্যকারিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিও উপাদান।

ক্যালসিয়াম মানুষের শরীরের পেশী এবং স্নায়ু ফাংশন সমর্থন বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ এবং হরমোন মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সাথে মানুষের শরীরের কোষের মধ্যে যোগাযোগ ও রক্ত সরবরাহ সহজতর করার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে।

উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা

উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা

যারা প্রাপ্তবয়স্ক আছে তাদের জন্য, ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া অনেক উপকারী। প্রাপ্তবয়স্কদের উচিত প্রতিদিন কম করে হলেও ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া।

আবার কিছু মানুষের জন্য উচ্চ পরিমাণের ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। ক্যালসিয়াম মানুষের হাড় ও দাঁতের শক্তি যোগায়।

আজ আমরা আলোচনা করবো উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা সম্পর্কে। কোন কোন খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকে তা নিয়ে।

উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা

তাহলে চলুন জেনে নেই উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা সম্পর্কে । নিচে একটি উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা দেয়া হলোঃ

দুধ

দুধ হলো ক্যালসিয়ামের অন্যতম সেরা উপাদান। দুধ হলো সবচেয়ে সহজলভ্য এবং জনপ্রিয় উপাদান। এছাড়া দুধে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি।

১ কাপ গরুর দুধে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ: ৩০০ মিলিগ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের শরীরের ক্যালসিয়ামের জন্য দুধের প্রয়োজন রয়েছে।

পনির

পনির হলো ক্যালসিয়ামের অনেক চমৎকার একটি উৎস। প্রতি আউন্স (২৮ গ্রাম) ২৪২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম আছে। আবার
নরম পনির এ ক্যালসিয়াম কম থাকে।যেমন ১ আউন্স শুধুমাত্র ৫২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামে প্রদান করে থাকে।

পনির একটি বোনাস হিসাবে আপনার শরীরের কাজ করে থাকে। যেমন,পনির দুগ্ধজাত দ্রব্যের ক্যালসিয়ামকে উদ্ভিদের উৎস থেকে আরও অনেক গুন্ সহজে শোষণ করে নিতে পারে।

পনিরও কিন্তু আপনার শরীরের প্রোটিন সরবরাহ করে থাকে। যা একজন মানুষের এই প্রোটিন খুবই প্রয়োজন।

আবার শক্ত র্পনিরগুলিতে স্বাভাবিক ভাবেই ল্যাকটোজ কম থাকে, যা ল্যাকটোজ বয়ষ্ক লোকেদের জন্য হজম প্রক্রিয়া অনেক অংশে সহজ করে থাকে।

পনির জাতীয় খাবারে স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে। যেমন, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে পানির জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

আবার দেখা গেছে পনির জাতীয় খাবার অধিক পরিমানে গ্রহণ করার ফলে মেটাবলিক সিন্ড্রোমের ঝুঁকি কমে, এটি এমন একটি অবস্থা যা আপনার হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

দই

দই ক্যালসিয়ামের একটি বিশেষ উৎস। অনেক রকমের দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, এটি এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করতে পারে এবং পুষ্টির শোষণ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।

এক কাপ সাধারণ দইতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন B2 এবং B12 রয়েছে। কম চর্বিযুক্ত দইতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।

কিছু গবেষণায় আরও দেখা যায় যে দইয়ের নিয়মিত ব্যবহার হৃদরোগ এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস বিকাশের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দই হল ক্যালসিয়ামের অন্যতম সেরা উৎস। এটি প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টির একটি ভাল উৎস।

বাদাম

বাদামে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে । এগুলি ফাইবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন ই এবং প্রোটিন মতো পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।

বাদাম প্রতি আউন্সে ৩.৫ গ্রাম ফাইবার (২৮গ্রাম), পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন সরবরাহ করে। উপরন্তু, তারা ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন ই এর একটি চমৎকার উৎস।

বাদাম রক্তচাপ, শরীরের চর্বি এবং বিপাকীয় রোগের জন্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ডাল এবং মটরশুটি

ডাল ও মটরশুটি তে রয়েছে ক্যালসিয়াম প্রোটিন, ফাইবার এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের আয়রন, জিঙ্ক, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম।

১ কাপ মটরশুটিতে ৫০-১৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। সিদ্ধ মটরশুটি আপনার ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়াতে সর্বোত্তম বিকল্প হিসাবে কাজ করে।

মটরশুটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। সকল প্রকার ডাল এ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। মটরশুটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সবুজ শাক

পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি খুবই স্বাস্থ্যকর। কিছু শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। যার মধ্যে রয়েছে কচুর শাক, পালং শাক।

শুকনো ডুমুর

শুকনো ডুমুরগুলিতে অন্যান্য শুকনো ফলের তুলনায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। আরও প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ভিটামিন কে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং ফাইবার থাকে।

ডুমুরগুলি পটাসিয়াম এবং ভিটামিন কে সরবরাহ করে, দুটিই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। শুকনো ডুমুরগুলিতে প্রায় ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

সূর্যমুখী ও তিলের বীজ

সূর্যমুখী বীজ ও তিলের বীজ এই গুলিতে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই এবং তামা রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

সূর্যমুখী বীজ

১ পাউন্ড শুকনো সূর্যমুখী বীজে প্রায় ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

তিলের বীজ

১০০ গ্রাম তিলের বীজ ৯৭৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। আপনার খাবারের উপরে শুকনো ভাজা তিলের বীজ ছিটিয়ে দিন ।

ডিম

ক্যালসিয়াম এর আরেকটি উৎস হলো ডিম। ডিম হল কয়েকটি খাদ্যতালিকাগত প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির মধ্যে একটি যাতে ভিটামিন ডি থাকে, যা শক্তিশালী হাড় গঠনে ক্যালসিয়ামের সাথে মিলে কাজ করে।

১টি বড় সেদ্ধ ডিমে প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

কমলা

কমলালেবুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে মুক্ত রেডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন বি৬ বেশি থাকায় হিমোগ্লোবিনের সংশ্লেষণে সাহায্য করে এবং এর ম্যাগনেসিয়ামের উপাদান রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

১টি সম্পূর্ণ কমলাতে ৫৫ মিলিগ্রাম (প্রায়) ক্যালসিয়াম রয়েছে।

কিউই

কিউই খুব জনপ্রিয় একটি ফল। এই সবুজ ফল আশ্চর্যজনকভাবে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। অতএব, আপনার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এগুলি যোগ করতে পারেন ।

১টি সম্পূর্ণ কিউইতে ২৩.৫ মিলিগ্রাম (প্রায়) ক্যালসিয়াম রয়েছে।

পেয়ারা

পেয়ারা একটি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল। এই সাধারণ ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, লাইকোপিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের জন্য সহায়ক।

পেয়ারাতে ম্যাঙ্গানিজও বেশি থাকে, যা খাদ্য থেকে শরীরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ শোষণে সহায়তা করে।

১টি পুরো পেয়ারায় ৯.৯ মিলিগ্রাম (প্রায়) ক্যালসিয়াম থাকে।

ব্ল্যাকবেরি

ব্ল্যাকবেরি হল সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার। এগুলি সুস্বাদু, পুষ্টিকর ৷ ১০০ গ্রাম ব্ল্যাকবেরিতে প্রায় থাকে ২৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

আমাদের এই পোস্ট এ আমরা আপনাদেরকে কিছু উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা তৈরী করে দিয়েছি। ক্যালসিয়াম যুক্ত আরো অনেক ফল ও শাকসবজি আছে যা আপনাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।

আশা করি আমাদের এই পোস্ট টি আপনাদের উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা বাছাই করতে সাহায্য করবে।

আরও নিত্য নতুন টিপস পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং ফেসবুক পেজে এ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

You cannot copy content of this page