জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম অর্থসহ
আজকে আমরা জানবো জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম অর্থসহ। সাহাবীরা ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে যুক্ত উচ্চপদস্থ মহিলাগণ এবং সেই সাথে তারা দ্বীনি ইসলাম প্রচার করতেন। এই সব সম্ভ্রান্ত নারী যারা ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তারা শুধু ইসলামের জন্যই আত্মনিয়োগ করেনি, বরং তাদের অনেক শিক্ষাগত, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অর্জনও রয়েছে।
মহিলা সাহাবীদের প্রায়শই প্রজ্ঞা, জ্ঞান,বুদ্ধি, বীরত্ব, সাহস, সততা, স্থিতিস্থাপকতা এবং আনুগত্যের আইকন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, তাদের ইসলামের প্রতি এই মহৎ ত্যাগের ফলে তারা জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা পূর্ণ স্থান অর্জন করেছেন।
ইসলাম ধর্মে মহিলা সাহাবীরা অনেক বেশি মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। অনেক মহিলা সাহাবীরা মানুষের কল্যাণে অনেক ভালো কাজ করেছেন এবং তাদের এই ভালো কাজের বিনিময়ে তারা জান্নাত লাভ করতে পারবে। আজকে মূলত এই সকল জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলাদের নামের একটি তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছে।
জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম অর্থসহ
এই তালিকা থেকে আপনি খুব সহজেই জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম জানতে পারবেন।
তাহলে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম সম্পর্কে।
জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম অর্থসহ
জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম ও নামের অর্থ নিম্নে দেওয়া হল :
১. আসিয়া
আসিয়া বিনতে আল-ফারাজ আল-জুরমিয়্যাহ ছিলেন নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন বিশিষ্ট সাহাবী। আসিয়া নামের অর্থ হলো ‘যিনি দুর্বল মানুষদেরকে সাহায্য করেন এবং তাদেরকে সুস্থ করে তোলেন’।
২. আয়েশা
আয়েশা বিনতে আবি বকর ছিলেন নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্যতম একজন স্ত্রী। যাকে আদর করে সবাই ‘বিশ্বাসীদের মা’ বলে ডাকতেন। তিনি ইসলাম প্রচারে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর প্রায় ৪৪ বছর ধরে তার বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। আয়েশা সুন্দর নামের অর্থ হল ‘জীবিত’, ‘যার একটি ভাল জীবন আছে,’ ‘জীবিত, সমৃদ্ধ’।
৩. আমিনা
আমিনা বিনতে ওয়াহব ছিলেন নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাতা। আমিনাহ নামটির অর্থ হল ‘সত্যবাদী, সৎ, নিরাপদ এবং বিশ্বাসযোগ্য’।
৪. আমরাহ
আমরাহ নামে ২০ জন সাহাবী ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবী রয়েছেন তারা হলেন, আমরাহ বিনতে আবী আইয়ুব, আমরাহ বিনতে উওয়াইম, আমরাহ বিনতে হাজম এবং আমরাহ বিনতে আল-রাবি। আমরাহ মূলত নামের অর্থ হল ‘মাথার টুপি (টুপি বা পাগড়ি)’।
৫. আমাহ
আমাহ ছিলেন একজন মহিলা সাহাবী। আমাহ ছিলেন খালিদ বিন সাঈদের কন্যা। সাহাবী আমাহ আজ- জুবায়র বিন আল-আওওয়ামের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। আমাহ নামের অর্থ হল ‘দাস’।
৬. আসমা
আসমা বিনতে আবু বকর ছিলেন আবু বকরের মেয়ে এবং আয়েশার বোন। আবার আবু বকর ছিলেন হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) এর অন্যতম একজন বিশেষ সাহাবী। আসমা বিনতে আবু বকর তিনি তার পিতার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম গ্রহণকারী ১৫ তম ব্যক্তি ছিলেন। আসমা নামের অর্থ হল ‘মূল্যবান, উন্নত, সুন্দর, উচ্চ বা মহান যা অন্যদের চেয়ে উচ্চতর’।
৭. আতিকা
সাহাবী আতিকা বিনতে জায়েদ তিনি তার কাজ কর্মের মাধ্যমে বা বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন কবি, দ্বিতীয় খলিফা উমর বিন আল-খাত্তাবের স্ত্রী হিসেবেও আতিকা পরিচিত ছিলেন। আতিকাহ নামের অর্থ হল ‘মুক্তিপ্রাপ্ত, উদার উন্নত চরিত্র এবং সুন্দরী মহিলা’।
৮. আতিলাহ
আতিলাহ নামে ৩ জন সাহাবী ছিলেন। যারা নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর সঙ্গী ছিলেন। আথিলাহ নামের অর্থ হল ‘একটি ভালো পরিবারে বা সম্মানিত বংশ থেকে জন্ম নেওয়া বা আগত ব্যক্তি’।
৯. আরওয়া
সাহাবী আরওয়া ছিলেন ইবনে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা এবং নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর চাচাতো বোন। আরওয়া নামের শব্দের অর্থ হল ‘চতুর, চটপটে, করুণাময়তা এবং সুন্দর বা সৌন্দর্য’।
১০. বারাকাহ
বারাকাহ একটি অত্যন্ত সুন্দর নাম। এই নামের তিন জন সাহাবী ছিলেন। এই তিনজন সাহাবী হলেন, বারাকাহ বিনতে থালাবাহ, বারাকাহ বিনতে ইয়াসার এবং বারাকাহ আল-হাবাশিয়াহ । বারাকাহ নামের অর্থ হল ‘আশীর্বাদ, অনুমোদন এবং সমৃদ্ধি বা প্রাচুর্য’।
১১. বুশরাহ
সাফওয়ান বিন নওফালের কন্যার ছিলেন বুশরাহ। ঐতিহাসিকদের মতে বুশরাহ দীর্ঘ আয়ু নিয়ে তিনি মুয়াবিয়ার যুগ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। বুশরাহ হল একটি ইসলামিক নাম যার অর্থ হল ‘সুসংবাদ, শুভ লক্ষণ এবং মুখ বা চেহারা’।
১২. ফারওয়াহ
ফারওয়াহ হল আরবি নাম। ফারওয়াহ নামের অর্থ হল ‘ধন, সম্পদ ও সমৃদ্ধি’। ইসলামিক ঐতিহাসিকদের মতে, ফারওয়াহ নামের আরোও কয়েকজন মহিলা সাহাবী ছিলেন। তাদের মধ্যে ফারওয়াহ আবু তামিম আল-আসলামি,ফারওয়াহ আল-জুহানি এবং ফারওয়াহ বিন কায়েস আল-কিন্দি উল্লেখযোগ্য মহিলা সাহাবী ছিলেন।
১৩. ফারিয়াহ
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর সাথীদের মধ্যে একজন ছিলেন ফারিয়াহ সাহাবী। ফারিয়াহ ছিলেন মালিক বিন সানান আল-আনসারীর কন্যা এবং সেই সাথে ছিলেন আবু সাঈদ আল-খুদরির বোন। ফারিয়াহ নামের অর্থ হল ‘পাহাড়ে একটি ভ্রমণ পথ বা উত্থাপিত রাস্তা’।
১৪. বুহাইয়া
বুহাইয়াহ হল একটি ইসলামিক নাম। বুহাইয়াহ নামের অর্থ হল ‘সুন্দর এবং দীপ্তিময়’। নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর দুই সাহাবী নাম ছিল বুহাইয়া। এই দুই সাহাবীর প্রকৃত নাম হল বুহাইয়া বিনতে বুসর এবং বুহাইয়া বিনতে আবদুল্লাহ আল-বাকরিয়া।
১৫. বারিরাহ
বিখ্যাত এবং সবচেয়ে সুপরিচিত সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন বারিরাহ। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর স্ত্রী সাইয়্যিদিনা আয়েশা (রা:)এর কর্তৃক মুক্ত হওয়া একজন ক্রীতদাস ছিলেন। বারিরাহ নামের অর্থ হল ‘পরহেযগার’।
১৬. ফাতিমা
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার স্ত্রী খাদিজার কনিষ্ঠ কন্যা ছিলেন ফাতিমা বা ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ। ফাতিমা নামটি এসেছে আরবি
থেকে। ফাতিমা একটি সুন্দর ও নিখুঁত নাম যার কারণে বেশির ভাগ মুসলিম পরিবারের শিশু কন্যার নাম রাখা হয় ফাতিমা। ফাতিমা নামের অর্থ হল ‘যে শিশুকে বুকের দুধ ছাড়ানো হয়েছে’।
১৭. ফাশাম
সাহাবীদের মধ্যে বেশ পরিচিত ছিলেন ফাশাম বিনতে আউস। ফাশাম এই নামের আর কোনো সাহাবী ছিলো না। ফাশাম একটি ইসলামিক নাম। ফাশম নামের অর্থ হল ‘বড় এবং প্রশস্ত’।
১৮. ফুকাইহা
ফুকাইহা নামের প্রায় অনেক সাহাবী ছিলেন। তবে ইসলামিকবিদদের মতে ফুকাইহা নামের বিশজন সাহাবী ছিলেন। এই বিস্ময়কর এবং বিস্তৃত নামের বিশজন সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফুকাইহা বিনতে ইয়াসার, ফুকাইহা বিনতে আল-মুত্তালিব, ফুকাইহা বিনতে আল-সুকান এবং ফুকাইহা বিনতে উবাইদ। ফুকাইহা একটি আরবি নাম। ফুকাইহা নামের অর্থ হল ‘প্রফুল্ল ও আনন্দময়’।
১৯. ঘুফাইরা
ঘুফাইরা ছিলেন একজন সাহাবী। হযরত আয়েশা(রাঃ) এর ক্রীতদাস ছিলেন ঘুফাইরা। তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ঘুফাইরা মূলত একটি আরবি শব্দ। ঘুফাইরা নামের অর্থ হল ‘ক্ষমা’।
২০. হালিমা
হালিমা ছিলেন নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সৎ বা পালক মা। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাল্যকালে হালিমা তাকে অনেক আদর যত্ন করে লালন পালন করেন। এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হালিমাকে তার মায়ের স্থান দেন ও অনেক শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদান করেন। এই হালিমা নামটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। হালিমা নামের অর্থ হল ‘একজন ভদ্র ও মৃদু স্বভাবের মহিলা বা ভদ্র মহিলা’।
২১. হাবিবা
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্যতম সঙ্গী ছিলেন হাবিবা। এবং সেই সাথে হাবিবা ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আত্মীয়। হাবিবা একজন সুপরিচিত সাহাবী ছিলেন। হাবিবা এর পুরো নাম হল হাবিবা বিনতে উবায়দ-আল্লাহ। হাবিবার পিতা ছিলেন নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রী জয়নাব বিনতে জাহশ এর ভাই। হাবিবাহ হল একটি ইসলামিক ও উন্নত মানের নাম। হাবিবা নামের অর্থ হল ‘প্রিয় বা প্রিয়’।
২২. হালাহ
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দাদা আবদুল-মুত্তালিব ইবনে হাশিমের স্ত্রীদের একজন ছিলেন হালাহ। সাহাবী হালাহ এর পুরো নাম ছিলো হালাহ বিনতে উহাইব। হালাহ একটি আরবি নাম। হালাহ নামের অর্থ আরবি ভাষায় বোঝায় ‘চাঁদের চারপাশে আলো বা একটি অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতির কানের আংটি’।
২৩. হাম্মানাহ
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন মহিলা সাহাবী ছিলেন জাহশ ইবনে রিয়াব। সেই জাহশ ইবনে রিয়াবের কন্যা ছিলেন হাম্মানাহ। যার পুরো নাম হল হাম্মানাহ বিনতে জাহশ। এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও হযরত আলীর(রাঃ) এর প্রথম চাচাতো বোন। হাম্মানাহ বিনতে জাহশ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি মুসআব ইবনে উমাইরকে বিয়ে করেন। হাম্মানাহ নামের অর্থ হল ‘পবিত্র চড়ুই বা স্বর্গের আশীর্বাদযুক্ত চড়ুই’।
২৪. হাফসা
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রীদের মধ্যে একজন হলেন হাফসা। হাফসা এর পুরো নাম হল হাফসা বিনতে উমর। হাফসা বিনতে উমর কে বিশ্বাসীদের মাও বলা হয়ে থাকে। এবং কুরআন মুখস্থকারীদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হলেন হাফসা বিনতে উমর। হাফসা একটি ইসলামিক নাম। হাফসা নামের অর্থ হল ‘যুবতী সিংহী’।
২৫. হিন্দ
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শাশুড়ি ছিলেন হিন্দ। যার পুরো নাম হল হিন্দ বিনতে আউফ। হিন্দ বিনতে আউফ তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শাশুড়ি হওয়ার কারনে “পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ শাশুড়ি” হিসাবে পরিচিত লাভ করেন । এবং সেই সাথে হিন্দ ইবনে আব্বাসের দাদী ছিলেন। হিন্দ নামের অর্থ হল ‘উটের দল বা উটের পাল’।
২৬. হাজিমা
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী ছিলেন হাজিমা। হাজিমা একটি ইসলামিক সুন্দর নাম। হাজিমা নামের অর্থ হল ‘অটল,সমাধান, বিচক্ষণতা, সংকল্প ও ন্যায়বিচার’।
২৬. ইসমা
সাহাবীদের মধ্যে একজন পরিচিত নাম হল ইসমা। ইসমা একটি আরবি নাম। ইসমা নাম আরো অনেক সাহাবী ছিলেন। আবার ইসলামিকবিদদের মতে প্রায় ১৩ জনের নাম ছিলো ইসমা। ইসমা নামের অর্থ হল ‘পুণ্য, পবিত্রতা এবং সুরক্ষা’।
২৭. জুমানা
জুমানা একজন পরিচিত সাহাবী ছিলেন। তার পুরো নাম জুমানা বিনতে আবি তালিব। নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চাচা আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা ছিলেন জুমানা বিনতে আবি তালিব। এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চাচাত বোন। জুমানা একটি ইসলামিক ও একটি সুন্দর নাম। জুমানাহ নামের অর্থ হল ‘রূপালি রঙের মুক্তা’।
২৮. জমিলা
জমিলা একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি ছিলেন মদিনায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম একজন। জমিলা তার পুরো নাম জামিলা বিনতে থাবিত। জামিলা বিনতে থাবিত ছিলেন থাবিত ইবনে আবি আল-আফলাহ এবং আল-শামুস বিনতে আবি আমিরের কন্যা। এবং সেই সাথে উমরের স্ত্রী ছিলেন তিনি। জামিলা একটি আবেদনময়ী এবং এটি একটি আরবি নাম। জমিলা নামের অর্থ হল ‘সুন্দর এবং করুণাময়।’।
২৯. জুওয়াইরিয়া
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্যতম স্ত্রী ছিলেন জুওয়াইরিয়া। জুওয়াইরিয়া তার পুরো নাম হল জুওয়াইরিয়া বিনতে আল-হারিস। জুওয়াইরিয়া একটি সুন্দর নাম। জুওয়াইরিয়া নামের অর্থ হল ‘একজন তরুণী/যুবতী বা দামাস্ক গোলাপ’।
৩০. খাদিজা
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রথম স্ত্রী ছিলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ। খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ তিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী এবং ইসলামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে আছেন। খাদিজা একটি আরবি সুন্দর নাম। খাদিজা নামের অর্থ হল ‘অকাল শিশু’।
৩১. লুবায়না
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী ছিলেন লুবায়না। লুবায়না মূলত প্রথমে একজন দাস ছিলেন। এবং আবু বকর কর্তৃক তিনি দাস থেকে মুক্ত হন। লুবায়না দাস থেকে মুক্ত হওয়ার পরপরই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। লুবায়না একটি সুন্দর নাম। লুবায়না নামের অর্থ হল ‘খাঁটি, পরিষ্কার এবং বিশুদ্ধতা’।
৩২. লুবাবা
লুবাবা একজন সাহাবী ছিলেন। তার পুরো নাম হল লুবাবা বিনতে আল-হারিস। লুবাবা তিনি উম ফাদল নামেও বেশ পরিচিত ছিলেন। লুবাবা একজন বিশিষ্ট মুসলিম মহিলা ছিলেন। এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী মধ্যে লুবাবা দ্বিতীয় মহিলা ছিলেন। লুবাবা নামের অর্থ হল ‘অন্তঃস্থ সারমর্ম’।
৩৩. লায়লা
আল মিনহালের কন্যা ছিলেন লায়লা। এবং মালিক ইবনে নুওয়াইরার স্ত্রী ছিলেন লায়লা। লায়লা তার পুরো নাম লায়লা বিনতে আল-মিনহাল। এবং লায়লা পরবর্তীতে সময়ে উম্মে তামিম নামে পরিচিত ছিলেন। লায়লা তিনি একজন অনেক সুন্দরী মহিলা ছিলেন। এবং অনেক পুরুষগন তার প্রতি আকৃষ্ট ছিল। কিন্তু লায়লা সেই সব পুরুষগনদের প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। লায়লা নামের অর্থ হল ‘রাত্রি, মদ্যপান ও নেশা’।
৩৪. লুহাইয়া
লুহাইয়া একজন পরিচিত সাহাবী ছিলেন। দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের স্ত্রী ছিলেন লুহাইয়া। লুহাইয়া একটি সুন্দর ও ইসলামিক নাম। লুহাইয়া নামের অর্থ হল ‘একটি খুব সুন্দর উপহার, এমন কিছু যা তৈরি করে কেউ জ্ঞানী এবং বিচক্ষণ’।
৩৫. মায়মুনা
মায়মুনা ছিলেন নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রী মধ্যে একজন। মায়মুনা তার পুরো নাম হল মায়মুনাহ বিনতে আল-হারিস আল-হিলালিয়ার। মায়মুনা তার আসল নাম ছিল বাররাহ। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই বাররাহ নামটি কে পরিবর্তন করে মায়মুনা (বরকতময়) রেখেছেন। মায়মুনা অনেক বেশি প্রভাবশালী একটি নাম। মায়মুনাহ নামের অর্থ হল ‘শুভ’।
৩৬. নাজিয়া
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী ছিলেন নাজিয়া। নাজিয়া তার পুরো নাম হল নাজিয়া বিনতে আল-ওয়ালিদ ইবন আল-মুগিরা। ওয়ালিদ ইবনে মুগীরার কন্যা ছিলেন নাজিয়া। এবং সেই সাথে সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী ছিলেন। নাজিয়া তিনি হলেন সেই সব মহিলাদের মধ্যে একজন যারা তাদের স্বামীদের আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। নাজিয়া একটি আরবি নাম। নাজিয়া নামের অর্থ হল ‘নিরাপদ’।
৩৭. নাহদিয়া
আল-নাহদিয়া ছিলেন নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন সহচর। আল-নাহদিয়া তাকে ইসলাম গ্রহণের প্রথম দিকের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আল-নাহদিয়া নাহদের গোত্রকে নির্দেশ করে থাকে। নাদিয়া একটি আরবি নাম। নাদিয়া নামের অর্থ হল ‘আশা’।
৩৮. নুসায়বাহ
নুসায়বাহ ছিলেন একজন সাহাবী। নুসায়বাহ বিনতে কাআব তিনি সরাসরি নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে ইসলামের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন। নুসায়বাহ একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় নাম। নুসায়বাহ নামের অর্থ হল ‘ভাল বংশের একজন বা একটি সম্মানিত বংশের সাথে জন্মগ্রহণ করেন’।
৩৯. রামলা
রামলা হলেন একজন সাহাবী। তার পুরো নাম হল রামলা বিনতে আবি সুফিয়ান। রামলা বিনতে আবি সুফিয়ান তিনি উম্মে হাবিবা নামেও বেশ পরিচিত ছিলেন। রামলা বিনতে আবি সুফিয়ান আমাদের প্রিয় নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রী ছিলেন। রামলা ( উম্মে হাবিবা) তাকে মুমিনদের মা বলে ডাকা হতো। রামলা একটি সুন্দর মিশরীয় নাম। রামলা নামের অর্থ হল ‘বালির একটি দানা’।
৪০. রুকাইয়া
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যাদের মধ্যে একজন ছিলেন রুকাইয়া। রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ একজন সাহাবী ছিলেন। রুকাইয়া একটি সুন্দর ও আরবি নাম। রুকাইয়া নামের অর্থ হল ‘ভদ্র, নরম এবং মৃদু স্বভাবের’।
৪১. রুমায়সা
রুমায়সা একজন পরিচিত সাহাবী ছিলেন। রুমায়সা বিনতে মিলহান তিনি ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে একজন। রুমায়সা বিনতে মিলহান তিনি ও তার স্বামীসহ অনেক পুরুষদেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে সাহায্য করেছিলেন। রুমায়সা নামের অর্থ হল ‘একগুচ্ছ ফুল বা মরুভূমির ছোট গাছের গুচ্ছ ‘।
৪২. রুমান
সাহাবী রুমান ছিলেন আবু বকরের স্ত্রী এবং সেই সাথে আয়েশার মা। রুমান একটি মিষ্টি ও আরবি নাম। রুমান নামের অর্থ হল ‘ডালিম’।
৪৩. রায়তা
সাহাবী রায়তা ছিলেন আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা। এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চাচাতো বোন। রায়তা একটি ইসলামিক নাম। রায়তা নামের অর্থ হল ‘হাদিসের বর্ণনাকারী’।
৪৪. রুফাইদা
রুফাইদা ছিলেন মদিনায় ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম নারীদের মধ্যে অন্যতম একজন। সাহাবী রুফাইদা আল-আসলামিয়া তিনি একজন ইসলামের প্রথম নারী চিকিৎসা কর্মী,সার্জন এবং প্রথম নারী মুসলিম নার্স হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। এছাড়া রুফাইদা তিনি তার চিকিৎসা দক্ষতা দিয়ে আয়েশা এবং খাদিজা সহ আরো অনেক নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। রুফাইদা ছিলেন একজন দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল নারী যা ইসলামের ইতিহাসে স্বরণীয় রয়েছে। রুফাইদা নামের অর্থ হল ‘সামান্য সাহায্যকারী এবং মানুষের একটি দল বা গোত্র যা উপকারী’।
৪৫. সালমা
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রথম দিকের মহিলা সাহাবীদের একজন ছিলেন সালমা। তার পুরো নাম সালমা বিনতে উমাইস। সালমা বিনতে উমাইস ছিলেন খাথাম গোত্রের। সালমা ছিলেন হামজা ইবনে আবদ আল-মুত্তালিব এর স্ত্রী। এবং তাদের একটি কন্যা ছিল তার নাম উমামা। সালমা ও তার স্বামী কন্যা সহ মদিনায় হিজরত করেন। সালমা অর্থ নামের অর্থ হল ‘শান্তি, সুস্থ, নিরাপদ এবং সুস্থ’।
৪৬. সাফিয়া
সাফিয়া ছিলেন নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রীদের মধ্যে একজন। সাফিয়া তার পুরো নাম সাফিয়া বিনতে হুয়ায়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর সাফিয়া বিনতে হুয়ায় তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। সাফিয়া হল একটি সুন্দর ও ইসলামিক নাম। সাফিয়া নামের অর্থ হল ‘বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন’।
৪৭. সাহলা
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী ছিলেন সাহলা। সাহলা বিনতে সুহাইল ছিলেন আবু হুদাইফা ইবনে উতবা এর স্ত্রী। সাহলা নামের অর্থ হল ‘নরম, মসৃণ, প্রবাহিত এবং সাবলীল’।
৪৮. সুমাইয়া
সুমাইয়া ছিলেন একজন পরিচিত সাহাবী। তার পুরো নাম সুমাইয়া বিনতে খায়্যাত। সুমাইয়া বিনতে খায়্যাত তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত বা সম্প্রদায়ের ইসলামের প্রথম মহিলা শহীদ বা প্রথম শহীদ হয়েছিলেন। সুমাইয়া নামের অর্থ হল ‘বিশেষ এবং উচ্চ’।
৪৯ . শিফা
শিফা ছিলেন একজন সাহাবী। তার পুরো নাম আল-শিফা বিনতে আবদুল্লাহ। আল-শিফা বিনতে আবদুল্লাহ ছিলেন ইসলামিক যুগের একজন গুণী ও জ্ঞানী নারী। তার অন্য আরেক নাম ছিল সেই নাম হল লায়লা। কিন্তু তিনি লায়লা নামে পরিচিত ছিলেন না। কারণ তার মধ্যে গুণ ও জ্ঞান এবং কাজের দক্ষতা থাকে কারনে তিনি আল-শিফা নামে পরিচিত লাভ করেন। আল-শিফা তিনি লোক-চিকিত্সার ও অনুশীলন করতেন। শিফা নামের অর্থ হল ‘নিরাময়কারী’।
৫০ . থুবাইতা
ইয়ার বিন জায়েদ আল-আনসারিয়ার কন্যা ছিলেন থুবাইতা। নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন থুবাইতা। থুবাইতা তিনি মদীনার প্রথম মুহাজিরদের মধ্যে একজন ছিলেন। এবং সেই সাথে থুবাইতা ছিলেন একজন বিশিষ্ট মহিলা সহচর। থুবাইতা নামের অর্থ হল ‘প্রতিষ্ঠিত, স্থিতিশীল এবং অটুট’।
৫১ . উমামা
নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চাচা হামজা ইবনে আবদুল-মুত্তালিবের কন্যা ছিলেন উমামা। উমামা তার পুরো নাম উমামা বিনতে হামজা। উমামা বিনতে হামজা তিনি তার মাতা ও পিতার সাথে মদিনায় হিজরত পালন করেন। এবং মদিনায় তারা কয়েক বছর বসবাস করেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতনির নামও ছিল উমামা। উমামা একটি আরবি নাম। উমামা নামের অর্থ হল ‘তিনশত উট’।
৫২ . উম্ম
উম্মে হাকিম ছিলেন একজন সাহাবী। হারিস আল মাখজুমি এর কন্যা ছিলেন উম্মে হাকিম। এবং সেই সাথে ইকরিমা ইবনে আবু জাহেলের স্ত্রী ছিলেন উম্মে হাকিম। উম্মে হাকিম তিনি একজন বীর মহিলা ছিলেন। উম্মে হাকিম এবং তার স্বামী ইকরিমা ইবনে আবু জাহেল এর সাথে উহুদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ বা যোগ দান করেন। উম্ম একটি আরবি নাম। উম্ম নামের অর্থ ‘মা’।
৫৩. উম্মে সালামা
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন উম্মে সালামা। উম্মে সালামা একজন বিশিষ্ট ও বেশ পরিচিত সাহাবী ছিলেন। অনেকের মতে খাদিজার পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রী উম্মে সালামা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। এবং সেই সাথে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অন্যতম প্রভাবশালী মহিলা সঙ্গী ছিলেনও বটে। উম্মে সালামা নামের অর্থ ‘সালামার মা’।
৫৪। জুনাইরা
জুনাইরা ছিলেন একজন সাহাবী। তিনি প্রথমে দাস ছিলেন। এবং পরে আবু বকর কর্তৃক তিনি দাস থেকে মুক্ত হন। জুনাইরা ছিলেন মক্কায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী প্রথম মহিলাদের মধ্যে একজন। জুনাইরা একটি মনোমুগ্ধকর নাম। জুনাইরা নামের অর্থ হল ‘জান্নাতে পাওয়া ফুল’।
তাহলে আমরা এতক্ষণ জানলাম জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম অর্থসহ। আশা করি আমরা আপনাদেরকে জান্নাতি মহিলা সাহাবীদের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পেরেছি।
এইরকম আরও নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং ফেসবুক পেজে এ লাইক দিয়ে সাথে থাকুন ।